শাবিস্তান বার্তা সংস্থার রিপোর্ট: ড. রাফিয়ী বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ(সা.) বিদায় হজ থেকে ফেরার পথে গাদীরে খুম নামক স্থানে ১২৪০০০ হাজিকে থামিয়ে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী নিজের পরবর্তী খলিফা ও ইমাম হিসাবে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলীকে মুসলিম উম্মাহর কাছে পরিচয় করিয়ে দেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে তাকে তার ন্যাজ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং ২৫ বছর পর ঠিক এই ১৮ই জিল হজ তিনি জনগণের অনুরোধে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
'জুহফা' নামক এলাকার কাছে 'গাদিরে খুম' নামক জলাশয়ের পাশে বিশ্বনবী (সা.) ঘোষণা করেছিলেন যে " মান কুনতু মাওলা ফাহাজা আলিয়ুন মাওলা" অর্থাত আমি যাদের মাওলা আলীও তাদের মাওলা। মুসলমানদের একটি ধারা মনে করে এখানে মাওলা শব্দের অর্থ নেতা, আর অন্য একটি ধারা মনে করে এখানে 'মাওলা' শব্দটির অর্থ বন্ধু।
ইমাম বোখারীসহ ৩৬০ জন সুন্নি মনীষী এ সংক্রান্ত হাদিস বর্ণনা করেছেন। এই হাদিসটির সনদ ১১০ সাহাবি কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে এবং ২৬ জন মুসলিম মনীষী এর সনদ ও পন্থা সম্পর্কে আলাদা বই রচনা করেছেন।
বিশ্বনবী (সা.) গাদিরে খুমে তিন দিন অবস্থান করেছিলেন। এই তিন দিন ধরে মুসলমানরা হযরত আলী (আ.)-কে আমিরুল মুমিনিন হিসেবে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন বলে বর্ণনায় এসেছে।
বিখ্যাত মুসলিম ইতিহাসবেত্তা আবু জাফার তাবারি এই হাদীসের সনদ ও পন্থাকে দুই খণ্ডের এক গ্রন্থে সংকলিত করেছেন।
গাদিরে খুমের ওই ঘটনার ২৫ বছর পর তৃতীয় খলিফা নিহত হলে মুসলমানদের ব্যাপক অনুরোধ ও পীড়াপীড়ির মুখে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) এখন থেকে ১৩৯৮ বছর আগে ঠিক আজকের দিনটিতে (১৮ ই জ্বিলহজ্ব) একান্ত অনীহা ও অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুসলমানদের রাজনৈতিক নেতা বা খলিফা হন। সামাজিক ন্যায়বিচার-ভিত্তিক আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা হিসেবে প্রায় ৫ বছর শাসন করার পর এক ধর্মান্ধ খারেজির সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয়ে (একুশে রমজান) তিনি শহীদ হন। হামলার সময় তিনি কুফার মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন।
রাসূল (সা.) বিভিন্ন সময়ে বলেছেন: আলী আমার থেকে এবং আমি তাঁর থেকে এবং আলীই আমার পর সমস্ত মুমিনদের ওলি তথা অভিভাববক ও নেতা" (তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ-১১০)
রাসূল (সা.) আরো বলে গেছেন, আলী সব সময়ই হকের পথে থাকবে। আলী (আ.)-কে মহব্বত করা ঈমান, আর আলী(আ.)’র সঙ্গে শত্রুতা করা মুনাফেকী (মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ-৪৮)। “ আমি জ্ঞানের শহর, আলী তার দরজা”(সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ;২০১)। এমনকি রাসূল (সা.) এ দোয়াও করেছেন যে, “হে আল্লাহ সত্যকে আলীর পক্ষে ঘুরিয়ে দিও। রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, কেবল মুনাফিকই আলীর সঙ্গে শত্রুতা করবে।
যে আলীকে দোষারোপ করল, সে আমাকে দোষারোপ করল, আর যে আমাকে দোষারোপ করল সে খোদাকে দোষারোপ করল। আল্লাহ তাকে মুখ নীচু করে দোজখে নিক্ষেপ করবেন।(সহি বুখারী-দ্বিতীয় খণ্ড, সহি মুসলিম- দ্বিতীয় খণ্ড, সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড)।
আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে খোদা যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ, যে আলীর সাথে শত্রুতা রাখে তুমিও তার সাথে শত্রুতা রাখ। (সহি মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ-৩৬২, মুসনাদে ইমাম হাম্বল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ-২৮১)
সাহাবিদের অনেকেই বলতেন, আমরা আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা দেখে কে মুনাফিক ও কে মুমিন তা নির্ধারণ করতাম।
572241